ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয়, নিয়ম, বিকল্প

ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে চলুন এ সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে আপনারা ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয় এবং ফরজ গোসলের নিয়ম, বিকল্প, এবং গোসলটি না করতে পারলে এর করণীয় সম্পর্কেও জেনে নিতে পারবেন।

ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয়
প্রত্যেকটি বিবাহিত নর-নারীর দের জন্য এটি বাধ্যতামূলক ফরজ করা হয়েছে। তাই এটি প্রত্যেকটি নর নারীকে মানতে হবে এবং এর কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে তা অবশ্যই আপনাদেরকে জানতে হবে তাহলে আপনারা এটি সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন।

পোষ্টসূচি পত্রঃ ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয়, নিয়ম, বিকল্প

ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয়

ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয় তা প্রত্যেকটি মুমিন ও মুসলিম ব্যক্তিদের এবং নারীদের জানা উচিত। হল ঈমানের একটা অঙ্গ, যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক পরিষ্কারতা বোঝায়। আল্লাহ নিজেই পবিত্র, তাই তিনি সকলকে পবিত্র থাকতে বলেছেন। পবিত্রতা বোঝানোর জন্য ফরজ গোসল একটি মৌল্যবান কাজ। আপনি যদি ফরজ গোসল না করেন, তার ক্ষতি জানতে হলে আমরা একটি প্রশ্ন করতে পারি ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হতে পারে

শারীরিকভাবে পবিত্র থাকার গোসল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রতিদিনই করা উচিত। অপবিত্র বা নাপাক হয়ে যদি আপনি গোসল না করেন, তাহলে আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যে ক্ষতি হতে পারে এবং এটি আপনার ইবাদতে আঘাত হয়ে যাতে নামাজ পড়তে এবং কোরআন তেলাওয়াত করতে আবার আরো কঠিন হয়ে যেতে পারে।


আপনি যদি ফরজ গোসল না করার জন্য নামাজ কাযা করে ফেলেন, তাহলে আপনার কবিরাহ গুনাহ হতে পারে। এটি খুব বড় গুনাহ, যা আল্লাহ সহজে ক্ষমা করবেন না। কবিরাহ গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে কিয়ামতের দিনে আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। একটি পবিত্র ও প্রস্তুত জীবন প্রবর্তন করতে গোসল ফরজ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি না করলে মানব জীবনে ধার্মিক এবং শারীরিক সমৃদ্ধির অভাব হতে পারে। অতএব, পবিত্রতা বজায় রাখতে এবং আল্লাহর ইবাদতে সমর্থ থাকতে ফরজ গোসল প্রতিদিনই পালন করা গুরুত্বপূর্ণ।

ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয় তা হচ্ছেঃ
  • ফরজ গোসল না থাকলে আপনার শরীর পবিত্র থাকে না তখন আপনি অপবিত্র হয়ে যান। এর ফলে মহান আল্লাহ তায়ালা আপনার ওপরে সন্তুষ্ট থাকবেনা এবং আল্লাহর রহমত ও হেদায়েত আপনার উপরে বর্ষিত হবে না।
  • ফরজ গোসল না করলে আপনি নাপাক হয়ে থাকবেন তখন ফেরেশতারা আপনার কাছে আসতে পারবে না এবং শয়তান জ্বীন ভুত কালো জাদু ইত্যাদি নানান ধরনের সমস্যা হবে এবং এর ফলে আপনাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
  • আপনার শরীর নাপাক থাকায় এবং আপনি অপবিত্র থাকায় আপনার শরীরে নানান ধরনের রোগ বালাই বাসা বাড়তে পারে।
  • ফরজ গোসল না করায় নাপাকও অপবিত্র থাকায় শয়তান খুশি হয় আর শয়তান খুশি হলে মহান আল্লাহতালা সন্তুষ্টি থাকেন না অসন্তুষ্টি হয়ে যান।
  • ফরজ গোসল না করলে আপনি ফরজ কাজ অর্থাৎ যে কাজ মহান আল্লাহতালা আপনাকে বাধ্যতামূলক হিসেবে আদেশ করেছেন সেটি আপনি অমান্য করছেন। তাই আপনার উচিত হবে ফরজ কাজ অবশ্যই মেনে চল।

ফরজ গোসলের বিকল্প

ফরজ গোসলের বিকল্প নেই। এর কারণ ফরজ গোসল আপনার জন্য বাধ্যতামূলক যেটি আপনাকে করতেই হবে। ফরজ গোসল করলে আপনি অনেক ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন এবং অনেক সুবিধা ও সওয়াব পাবেন। আপনি যদি ফরজ গোসল না করেন তাহলে মহান আল্লাহতালা আপনার উপরে অসন্তুষ্টি হবেন এর ফলে মহান আল্লাহতালার রহমত ও তার রহমতের ফেরেশতা আপনার কাছে আসবে না এবং আপনার উপরে অনেক লানত বর্ষিত হবে এছাড়া অনেক গুনাহে পড়ে যাবেন। খারাপ জিন ভূত কালো জাদু ও খারাপ বাতাস এর পাল্লায় পড়ে আপনার শারীরিক অনেক ক্ষতি হবে।

এছাড়াও আপনি যদি ফরজ কাজ বাধ্যতামূলক প্রতিনিয়ত করে থাকেন তাহলে মহান আল্লাহতালা আপনার উপরে সন্তুষ্ট হবেন কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা নিজে পবিত্র এবং পবিত্রতাকে অনেক বেশি পছন্দ করেন। মহান আল্লাহতালা আপনার উপরে খুশি হয়ে পরকালে আপনাকে জান্নাত দেবে এবং জাহান্নামের ভয়াবহ আজাদ থেকে নাম দেবেন আর আপনি যদি ফরজ গোসল ফরজ হওয়া সত্ত্বেও আপনি যদি ভালো না করেন তাহলে আপনি পরকালে অনেক আজাবের শিকার হবেন এবং জাহান্নামের অধিবাসী হবেন।

ফরজ গোসলের নিয়ম

ফরজ গোসলের নিয়ম আপনারা অনেকেই জানেন না তবে ফরজ গোসল সকলের জন্য বাধ্যতামূলক কারন ফরজ গোসল এমন একটা কাজ যেটি না করা পর্যন্ত আপনাদের শরীর পবিত্র হবে না এবং মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবেন না। তাই ফরজ গোসল আদায় এর জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে। তো সে নিয়মগুলো হচ্ছেঃ
  • ফরজ গোসল শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ বলতে হবে। যদি টয়লেট এর ভেতরে আপনাদের গোসলখানা হয় তাহলে বিসমিল্লাহ মুখে উচ্চারণ করা যাবে না আপনারা মনে মনে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করবেন।
  • সবার আগে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ভালো করে ধুয়ে নেবেন।
  • তারপরে আপনার লজ্জা স্থান ধুয়ে নিতে হবে। লজ্জাস্থানের সঙ্গে সঙ্গে যদি আপনার শরীরের কোন জায়গায় নাপাকি লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই সেই নাপাকিগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • এরপরে অজু করে নেওয়া এবং সারা শরীর এমনভাবে ধুতে হবে যাতে করে শরীরের কোন অংশ শুকনো না থাকে।
  • আপনি যদি আমাদের দেখানো এইসব নিয়ম গুলো মেনে চলেন তাহলে অবশ্যই আপনার ফরজ গোসল আদায় হয়ে যাবে। আর এইসব নিয়ম গুলো আমাদের নিয়ে কোন নিয়ম নাই এইসব নিয়ম হচ্ছে কোরআন হাদিসের নিয়ম তাই আপনাকে অবশ্যই ফরজ গোসল আর এর জন্য এই নিয়মগুলো মানতে হবে।

পুরুষের ফরজ গোসলের নিয়ম

পুরুষের ফরজ গোসলের নিয়ম হচ্ছেঃ
  • সর্বপ্রথম দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধোঁয়া।
  • তারপরে লজ্জাস্থান এবং শরীরে ও কাপড়ে লেগে থাকা নাপাকি ধুয়ে ফেলা।
  • এরপরে অজু করা এবং সারা শরীরে পানি ঢালা এবং শরীরের সকল জায়গায় পানি প্রবেশ করানো যাতে রোম পরিমান জায়গা শুকনো না থাকে।
  • গোসল করার পরে গোসলের স্থান থেকে সরে দাঁড়িয়ে পায়ে পানি ঢালা।

নারীর ফরজ গোসলের নিয়ম

  • সর্বপ্রথম দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধোঁয়া।
  • তারপরে লজ্জাস্থান এবং শরীরে ও কাপড়ে লেগে থাকা নাপাকি ধুয়ে ফেলা।
  • প্রস্রাব লাগলে প্রস্রাব করা। এ সময়ে প্রস্রাব করলে ভেতরে থাকা সকল নাপাকি বের হয়ে যায়।
  • এরপরে অজু করা এবং সারা শরীরে পানি ঢালা এবং শরীরের সকল জায়গায় পানি প্রবেশ করানো যাতে রোম পরিমান জায়গা শুকনো না থাকে।
  • গোসল করার পরে গোসলের স্থান থেকে সরে দাঁড়িয়ে পায়ে পানি ঢালা।

সহবাসের কতক্ষণ পর ফরজ গোসল করতে হয়

সহবাসের কতক্ষণ পর ফরজ গোসল করতে হয় সে বিষয়ে জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। কারণ ফরজ গোসল প্রত্যেকটি বৈবাহিক নারী ও পুরুষদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি তাদের উপরে ফরজ হয়েছে এটি যদি তারা পালন না করে তাহলে অবশ্যই তাদের উপরে গুনাহ লেখা হবে এবং পরকালের দিনে তাদেরকে এর জন্য অনেক আজাব সহ্য করতে হবে এবং জান্নাত থেকে বিতাড়িত করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তাই আমাদের জানা উচিত ফরজ গোসলের গুরুত্ব বিকল্প এবং কত তাড়াতাড়ি এই গোসলটি পালন করতে হয়। চলুন তাহলে জেনে নেই সহবাসের কতক্ষণ পর ফরজ গোসল করতে হয়।
সহবাসের কতক্ষণ পর ফরজ গোসল করতে হয়
আসলে কোরআনে বা হাদিসের কোথাও বর্ণিত করা হয়নি যে ফরজ গোসলের সময়সীমা সম্পর্কে। তবে নবী করীম (সাঃ) এর আমল মতে পাওয়া যায় যে তিনি খুব দ্রুত ফরজ গোসল সেরে ফেলতেন। কারণ যত দ্রুত সম্ভব ফরজ গোসল করাটা প্রত্যেকটি নর-নারীর জন্য সুন্নত। তবে রাতে সহবাস করে থাকলে অবশ্যই আপনাকে সূর্য অস্ত্র অর্থাৎ উঠে যাওয়ার আগেই আপনার ফরজ গোসল সেরে ফেলা আপনার জন্য উত্তম। কেননা অনেক বৈজ্ঞানিকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে কোন ব্যক্তি যদি নাপাক শরীরে থাকে অর্থাৎ ফরজ গোসল না করে থাকে তাহলে সূর্য ওঠার পর সূর্যের তাপে তার শরীর দুর্বল হয়ে থাকে এবং নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও দ্রুত গোসল না করার ফলে শরীরের শুক্রাণুর ঘাটতি পরে। তাই আমাদের সকলকে সহবাসের পর দ্রুত ফরজ গোসল সেরে ফেলতে হবে।

ফরজ গোসল না করতে পারলে করণীয়

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেছেন যে তোমরা যদি সফরে থাকো শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রস্রাব পায়খানা সেরে এসে অথবা সহবাসের পর পানি না পাও এবং পানি ব্যবহার করতে একেবারে অক্ষমত হয়ে থাকো তাহলে তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে পবিত্র হতে পারো। এ থেকে বোঝা যায় যে আপনারা কারাও যদি ফরজ গোসল না করতে পারেন সেটি করতে অক্ষম হন অথবা পানি ব্যবহার করতে আপনারা না পারেন সেই ক্ষেত্রে আপনারা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে পবিত্র হতে পারবেন। এর ওপরে আর কোন উপায় খুঁজে পাওয়া যায় না অথবা মহান আল্লাহতালা আদেশ করেননি আপনি যদি ফরজ গোসল করতে না পারেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়টি মানতে হবে না হলে আপনি ফরজ গোসল না করার গুনাহ পেয়ে যাবেন।

এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এই টাইমমুম করে আপনারা কি সম্পূর্ণ পবিত্র হতে পারেন এবং নামাজ পড়তে পারবেন। হ্যাঁ আপনারা ফরজ গোসল না করতে পারলেও যদি তায়াম্মুম করতে পারেন তাহলে আপনি সম্পূর্ণ পবিত্র হতে পারবেন এই তায়াম্মুম দিয়ে আপনারা নামাজও পড়তে পারবেন। তবে তায়াম্মুম আগে অবশ্যই আপনার নাপাকি জায়গা নাপাকি জামাকাপড় এবং লজ্জাস্থানের নাপাকি পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক অবশ্যই আপনাকে ফরজ গোসল করতে হবে। এবং আপনারা যারা এখনো ফরজ গোসল করেন না এটি মানেন না তাহলে আপনারা আগে ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয় এবং ফরজ গোসলের নিয়ম বিকল্প এছাড়াও ফরজ গোসল না করতে পারলে করণীয় কি আপনাদের তা অবশ্যই জানতে হবে। আর আশা করতে পারি যে আপনারা যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা অবশ্যই ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয় এবং নিয়ম বিকল্প ও ফরজ গোসল না করতে পারলেও এর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এবং আরো আশা করতে পারি যে আপনার আজ থেকে সাবধান ও সচেতন হয়ে যাবেন ফরজ গোসল সম্পর্কে।


আপনাদের যাদের উপরে ফরজ গোসল ফরজ হয়েছে অবশ্যই তাদেরকে এটি পালন করতে হবে কারণ এটি মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপরে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে এর ফলে তারা পবিত্রতা অর্জন করতে পারবে। আর কথা না বাড়িয়ে এখানে শেষ করছি দেখা হবে পরবর্তী কোনো আর্টিকেলে এতক্ষণ যাবৎ আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য এবং আপনাদের মূল্যবান সময়টি আমাদের আর্টিকেলের পেছনে ব্যয় করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরাবি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url