রমজান মাসে রোজা না রাখার শাস্তি,নিয়ত,ফজিলত

রমজান মাসে রোজা না রাখার শাস্তি অনেকটা ভয়াবহ কারণ রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেকটি মুসলিমদের জন্য ফরজ। তাই আমাদের রমজান মাসে রোজা না রাখার শাস্তি জানা উচিত তাহলে আমরা কখনো রোজা ভাঙ্গা কথা মাথায় নিয়ে আসতে পারবো না।
রমজান মাসে রোজা রাখার নিয়ত
আপনাদের ভেতরে অনেকেই রয়েছে যারা রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ জানা সত্ত্বেও রোজা রাখেনা। কিন্তু তারা জানে না যে রমজান মাসে রোজা না রাখার শাস্তি সম্পর্কে। তাই চলুন জেনে এবং ফরজ কাজ পালন করতে নিজেকে আগ্রহী করে তুলি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রমজান মাসে রোজা না রাখার শাস্তি

রমজান মাসে রোজা না রাখার শাস্তি

রমজান মাসে রোজা না রাখার শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। একজন মুমিন ব্যক্তি হওয়ার জন্য যে পাঁচটি গুণ দরকার তার মধ্যে রোজা হচ্ছে অন্যতম। প্রত্যেক নবীর উম্মতের জন্য রোজা মহান আল্লাহতালা ফরজ করে দিয়েছিলেন কিন্তু তাদের রোজা দিন এবং তাদের রোজা রাখার নিয়ম কানুন সকল কিছু ভিন্ন ছিল। আর যারা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত তাদের রোজা রাখার নিয়ম নীতি এবং সময় ভেদে ভিন্ন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উম্মতের উপর মহান আল্লাহতালা রমজান মাসের ৩০ দিন রোজা রাখা ফরজ করেছেন। ফরজ অর্থ হচ্ছে যে কাজ মহান আল্লাহতালা বাধ্যতামূলক করেছে যে কাজ অবশ্যই তাকে পালন করতে হবে না হলে সেটি গুনাহ হয়ে যাবে।

আরো পড়ুনঃ সকালে টক দই খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

আল্লাহর ইবাদতের জন্য মহান আল্লাহতালা কয়েকটি কাজ আমাদেরকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে ফরজ কাজ যেমন নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি। আমরা যদি এই কাজগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখি তাহলে মহান আল্লাহতালা আমাদের ওপরে সন্তুষ্ট হবেন না। মহান আল্লাহতালার রহমত বর্ষিত হবেন না তখন আমরা দুনিয়াতে আল্লাহর নিয়ামত অনুভব করতে পারবো না। একজন প্রকৃত মুমিন ও মুসলিম হতে হলে এবং আল্লাহভিরু ও নবীর আশিক হতে হলে অবশ্যই নবীর যেই কাজগুলো পালন করেছে সেই কাজগুলো পালন করতে হবে নবী যে ৩০ দিনে রমজান মাসে রোজা রেখেছে সেই ৩০ দিন আমাদের কেউ রোজা পালন করতে হবে। তা না হলে পরকালে অনেক শাস্তির মুখোমুখি আমরা হব।

যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ত্যাগ করবে সেই ব্যক্তি কবিরা গুনায় লিপ্ত হইবে এটি মহান আল্লাহতালা কোরআন শরীফের বর্ণনা করেছেন। কবিরা গুনার জন্য আপনাকে অনেক শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে। আল্লাহ অসন্তুষ্টি হয়ে তার ওপরে দুনিয়াতে নাজাতের কোন পথ দেবেন না অর্থাৎ পবিত্র কষ্ট শাস্তি পেতে হবে এবং ওই পরিতেও ভয়াবহ জাহান্নামের আগুনে পড়তে হবে। এছাড়াও পরকালের প্রথম ধাপ হচ্ছে কবর, আপনি যদি রোজা না রাখেন তাহলে ফরজ কাজ লংঘন করা হবে। আর এই ফরজ কাজ লংঘন করার জন্য আপনি কবরে মুনকার ও নকির নামক দুই ফেরেশতা আসবে তখন আপনারা তার প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবেন না এবং আপনার ওপরে শুরু হয়ে যাবে আজাব, অত্যাচার, শাস্তি ইত্যাদি।

রোজা-রাখার-উপকারিতা-ইসলাম

তাই আমরা সকলে চেষ্টা করব রমজান মাসে রোজা না রাখার শাস্তির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার। এজন্য আমরা সুন্নত রোজা নফল রোজা যদি না পালন করতে পারি কিন্তু আমাদেরকে অবশ্যই ফরজ রোজা পালন করতে হবে। তাহলে আমরা রমজান মাসে রোজা না রাখার শাস্তি এর হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবো এবং পরকাল ও ইহকালে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারব।

রমজান মাসে রোজা রাখার নিয়ত

রমজান মাসে রোজা রাখার নিয়ত সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নয়। কিন্তু আমাদের সকল কাজ করার আগে নিয়ত বাধাটাই হচ্ছে মেইন। সকল কাজের আগে নিয়ত বাধাটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা যেকোনো কাজের আগে সেই কাজ এর নিয়ত করলে সেই কাজটি আমরা সঠিকভাবে করতে পারব। এবং সেই কাজের প্রতি আগ্রহী হতে পারব। তাই আমাদেরকে অবশ্যই রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য নিয়ত বাধতে হবে। তাহলে আমরা যদি কোন কারণেই অসুস্থতা হয়ে পড়ি এবং রোজা নাও রাখতে পারি, তবুও মহান আল্লাহতালা এই নিয়তের উসিলায় আমাদের রোজাটা কবুল করে নেবেন।

রমজান মাসে রোজা রাখার নিয়ত হচ্ছেঃ নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

মহান আল্লাহতালায় সকল ভাষায় বোঝেন সকল ভাষায় জানেন কেউ না তিনি হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা তিনি সকল কিছুর সৃষ্টি করেছেন। তাই আপনারা নিজ নিজ ভাষায় রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য নিয়ত করতে পারেন। আপনারা যদি আরবীতে না পারেন তাহলে বাংলায় নিয়ত করতে পারেন যেমনঃ

রমজান মাসে রোজা রাখার বাংলা নিয়তঃ হে আল্লাহ আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য এবং আমি আপনার ইবাদত ও গোলামের পরিচয় দেওয়ার জন্য এবং প্রকৃত ঈমানদার ও মমিন বান্দা হওয়ার জন্য ও পরকালের শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত করছি।

রমজান মাসে দান করার ফজিলত

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন দানের উদার। এবং তার সাহাবীরাও ছিল দানশীল। কেননা তাদের কাছে যদি দু টাকা থাকে তাহলে তারা ৩ টাকা দান দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতো। দান মানুষের মনকে উদার করে দেয় এবং নিজের ভেতরের খারাপ অংশকে ভালো করতে সাহায্য করে। কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহতালা ফরজ কাজের পরে দান সম্পর্কে তার কাছ থেকে শুনতে চাইবেন। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে পৃথিবীর বুকে অনেক ধন সম্পদ দিয়েছে। দানের মাধ্যমে নিজেকে এবং নিজের ধন সম্পদকে পবিত্র করা যায় ও হালাল করা যায়।

আরো পড়ুনঃ বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা ৮টি

জান এমন একটা কাজ যে কাজ নিজেকে পবিত্র করে এবং মহান আল্লাহ তাআলার নিকটবর্তী হওয়ার রাস্তা হয়ে ওঠে। দান করলে মহান আল্লাহতালা খুশি হন এবং তার ধন-সম্পদ আরও বাড়িয়ে দেন। আল্লাহর এক সাহাবী হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার ঘরে তিন দিন যাবত কোন খাবার ছিল না তারা তিনদিন না খাবার খেয়ে থাকে। এবং সর্বশেষ তার স্ত্রীর একটি কাপড় বিক্রি করে ডালিম কিনে নিয়ে আসে খাওয়ার জন্য কিন্তু রাস্তায় এক ফকির তার কাছ থেকে তার হাতের ডালিম টি খাওয়ার জন্য চাইলো। সে কোন দ্বিধাবোধ না করে তিন দিন না খাওয়ার পরেও তার হাতের ডালিমটাকে খেতে দেয়। সেই ডালিমটির দাম ছিল ৬ দিনহার।

আল্লাহর রাস্তায় ৬ টাকা অর্থাৎ ৬ দিনহার দান করার ফলে সেই দিনেই মহান আল্লাহ তাকে একটি ঘোড়ার মালিক রাস্তা দিয়ে ঘোড়া বিক্রি করতে যাচ্ছিল হযরত আলীকে দেখে সেই ব্যক্তি হযরত আলীকে এই ঘোড়াটি দেয় এবং বলে ১২০ দিনহার দিয়ে তুমি এই ঘোড়াটি আমার কাছ থেকে নেওয়া এবং বাজার থেকে বিক্রি করে সেই টাকা আমাকে দিয়ে তোমার যে টাকা লাভ হবে সেই টাকা তুমি রেখো অর্থাৎ লাভের অংশটি তুমি নিও। হযরত আলী কোন চিন্তা ভাবনা না করে কখনোই সেই ঘোড়াটি নিয়ে বাজারে বিক্রয় করে ১৮০ দিনহার পায়। তখন তার ৬০ দিনহার লাভ হয়। তাহলে এ থেকে আপনারা বুঝতে পারলেন যে হযরত আলী পূর্বে ছয় দিনহার আল্লাহর রাস্তায় দান করার জন্য আল্লাহতালা তাকে ৬০ দিনহার এর মালিক বানিয়ে দেয়।

রমজান-মাসে-রোজা-রাখার-নিয়ত

তাহলে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে দান করলে আমাদের সম্পদ কমে যায় না বরং আমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং সেটি পবিত্র হয়ে যায়। এছাড়াও রমজান মাসে রোজার সময় দান করলে অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এক টাকা দান করলে ৭০ টাকা দানের সওয়াব পাওয়া যায়। আপনি যদি এক হাজার টাকা দান করেন তাহলে ৭০ হাজার টাকা দানের সওয়াব পাবেন। এছাড়াও আমরা যদি আমাদের দান কে সঠিকভাবে করতে চায় তাহলে অবশ্যই আমাদের দানটি গোপনীয় হওয়া উচিত কারণ যে ব্যক্তি গোপন ভাবে দান করে সেই ব্যক্তির দানটি মহান আল্লাহর দরবারে অতি নিকটে পৌঁছে যায় এবং সেটি আল্লাহতালা কবুল করে নেয়।

যে ব্যক্তি ইহকালে দান করে যাবে সেই ব্যক্তি পরকালে কবরে বসে থেকে সওয়াব পাবে। এছাড়াও যদি আপনি রমজান মাসে কোন এক ব্যক্তিকে ইফতারের সময় ইফতারি করার ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আপনি সেই ব্যক্তি রোজা রাখার জন্য যেই সওয়াব পাই ঠিক সেই ব্যক্তি ওই ব্যক্তিকে ইফতারের সময় খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য একই সব পায়। তাহলে আপনি বুঝতে পারছেন যে রমজান মাসে দান করলে রোজার সব পাওয়া যায় তাই আমরা রমজান মাসে বেশি বেশি করে দান করব।

রোজা রাখার উপকারিতা ইসলাম

রোজা রাখার উপকার ইসলামে অনেক কথা রয়েছে। রোজা রাখার জন্য আমরা এইকাল এবং পরকালে অনেক সম্মান পাবো। চলুন আমরা জেনে নেই যে রোজা রাখার উপকার গুলোঃ

  • রোজা রাখলে মহান আল্লাহতালা খুশি হন।
  • রোজা রাখলে আমাদের ফরজ কাজটি পালন করা হয়।
  • প্রকৃত মুমিন ও ঈমানদার হওয়ার জন্য রোজা রাখার গুরুত্ব অনেক।
  • শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখতেও রোজা অনেকটা উপকারী।
  • নবীর পরকালে সুপারিশ পাওয়ার জন্য রোজা রাখার গুরুত্ব অনেক। কেননা নবী রোজা রাখতেন এবং তার উম্মতদের রোজা রাখতে আদেশ করেছেন।
  • ইহকাল ও পরকালের শান্তি ও সম্মানের জায়গার জন্য রোজা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
  • কিয়ামতের দিনে আল্লাহর রহমতের জন্য রোজার গুরুত্ব অনেক।
  • পরকালে এবং জাহান্নামের শাস্তির হাত থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই রোজা পালন করতে হবে কেননা রোজা আমাদের উপরে মহান আল্লাহ তা'আলা ফরজ করেছেন।

রমজান মাসে রোজা রাখলে কি হয়

প্রত্যেকটি মুসলিমের জন্য রোজা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোজার অনেক ফজিলত রয়েছে এবং এই পবিত্র রোজা সম্পর্কে মহান আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে অনেক কথা বর্ণিত করেছেন। এই রোজা মাসে রোজা রাখলে সকল মানুষ অনেক পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে। রমজান মাসে সকল রোজাদার ব্যক্তিরা নিষ্পাপ হয়ে যায়। কেননা মহান আল্লাহতালা সেই ব্যক্তিটি রোজা কবুল করে যে ব্যক্তি সকল পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে তাই সকল মুসলিমরা রোজা রাখে এবং এই রোজাটি কবুল করার জন্য সকল পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে।

উপসংহার

প্রিয় বন্ধুরা আপনারা হয়তো এতক্ষণে আমাদের আর্টিকেলটি পড়েছেন এবং আর্টিকেলটি পড়ে রমজান মাসে রোজা না রাখার শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন। আশা করি যে আপনারা রমজান মাসের রোজা আর কখনো ছাড়বেন না। এবং রমজান মাসে বেশি বেশি করে দান সদকা করবেন। কারণ আল্লাহতালা দানশীল এবং দানশীল ব্যক্তিকেও বেশি ভালোবাসে। রমজান মাসে রোজা না রাখলে অনেক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে আমাদেরকে তাই আমরা এই শাস্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ও প্রকৃত মুমিন বান্দা হওয়ার জন্য অবশ্যই রোজা রাখব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরাবি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url